🌍 SLST ভূগোল প্রস্তুতি: ভূকম্প তরঙ্গ ও ভূ-অভ্যন্তরের গঠন | Seismic Waves

SEISMIC WAVES

📚 বিষয়ঃ ভূগোল – ভূকম্পবিদ্যা (Seismology)
🧑‍🏫 উপযোগীঃ SLST,  WBCS, PSC, RAILWAY, TET, CTET ও অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা

---

📝 ভূমিকা (Intro):

ভূগোল এমন একটি বিষয়, যা শুধুমাত্র স্থান সম্পর্কিত জ্ঞানই নয় বরং পৃথিবীর গঠন, পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক কার্যকলাপ সম্পর্কেও আমাদের সচেতন করে তোলে। তার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হল ভূমিকম্প ও ভূকম্প তরঙ্গ (Seismic Waves)। এই অংশটি শিক্ষক নিয়োগ (SLST) বা অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় প্রায় প্রতি বছর প্রশ্ন আসে।
এই ব্লগ পোস্টে আমরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূকম্প তরঙ্গের প্রকারভেদ, গতি, মাধ্যম ও বিশ্লেষণ নিয়ে আলোচনা করব – যা শুধুমাত্র তোমার প্রস্তুতিতে সাহায্য করবে না, বরং শেষ মুহূর্তের রিভিশনের জন্যও কাজে লাগবে।

---

🌐 ভূকম্প তরঙ্গ কী? (What are Seismic Waves?)

ভূমিকম্পের ফলে ভূঅভ্যন্তরে যে শক্তি নির্গত হয় তা তরঙ্গ আকারে ভূপৃষ্ঠে ছড়িয়ে পড়ে। এই তরঙ্গগুলোকে ভূকম্প তরঙ্গ (Seismic Waves) বলা হয়। ভূ-অভ্যন্তরের গঠন ও স্তর সম্পর্কে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায় এই তরঙ্গগুলোর বিশ্লেষণের মাধ্যমে। রুশ ভূগোলবিদ বি. বি. গোলিতসন বলেন –“ভূমিকম্প হল ভূঅভ্যন্তরের গঠন সম্পর্কে আলো প্রদানকারী প্রদীপ।”

📘 ভূকম্প তরঙ্গের শ্রেণিবিভাগ

ভূকম্প তরঙ্গকে প্রধানত দুইভাগে ভাগ করা হয়:

১. দেহ তরঙ্গ (Body Waves)

যে তরঙ্গ ভূকম্পকেন্দ্র থেকে ভূঅভ্যন্তরের মধ্যে দিয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এর দুটি উপপ্রকার:

🔹 P-তরঙ্গ (Primary Wave):

• এটি সর্বপ্রথম উপকেন্দ্রে পৌঁছে।
• গতি: ৫-১৪ কিমি/সেকেন্ড
• সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে ছড়ায়।
• কঠিন, তরল ও বায়বীয় – সব মাধ্যমে চলতে পারে।
• সর্বাধিক দ্রুতগতিসম্পন্ন তরঙ্গ।

🔹 S-তরঙ্গ (Secondary Wave):

• গতি: ৩.৫-৭.২ কিমি/সেকেন্ড
• কেবলমাত্র কঠিন মাধ্যমে চলে।
• তরল বা গ্যাসীয় মাধ্যমে চলতে পারে না।
• তরঙ্গপথের সমকোণে ওঠানামা করে চলে।

২. পৃষ্ঠ তরঙ্গ (Surface Waves)  L- তরঙ্গ : 

• P ও S তরঙ্গের পরে সৃষ্টি হয়।
• গতি: ৩.৫-৫ কিমি/সেকেন্ড
• ভূপৃষ্ঠ বরাবর ছড়িয়ে পড়ে এবং সবচেয়ে বিধ্বংসী।
• এই তরঙ্গ সর্বাপেক্ষা মন্থরতম।
•  এই তরঙ্গ ভূ-ত্বকের মধ্য দিয়ে কেবল অগ্রসর হয়।
• এই তরঙ্গের ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা সবচেয়ে বেশী এবং এর প্রভাবে ভূপৃষ্ঠে ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়।
• দুটি ধরন: Love Wave ও Rayleigh Wave 
• সিমোগ্রাফ যন্ত্রে এই তরঙ্গ সবার শেষে ধরা পড়ে, একে পৃষ্ঠতরঙ্গ বা L-wave বলে।
•  এই তরঙ্গঙ্গকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়- 

                     [i] Lateral Querwellen wave [Lq]  এবং  

                    [ii] Rayleigh wave [Lr] 

•  Lq তরঙ্গটি ১৯১১ সালে A.E.H. Love আবিষ্কার করেন ফলে একে Love wave ও বলা হয়। এই তরঙ্গটি তার গতিপথের উভয়দিকে লম্বভাবে সর্পিল গতিতে সামনের দিকে অগ্রসর হয়। এর ফলে ভূ-পৃষ্ঠের রেললাইন ভূমিকম্পের সময় এঁকেবেঁকে যায়,
•  Lr তরঙ্গটি ১৮৮৫ সালে Lord Royleigh আবিষ্কার করেন বলে একে Rayleigh wave বলা হয়। এই তরঙ্গ পুকুরের জলের ঢেউ-এর ন্যায় অগ্রসর হয়।

---

🌍 ভূ-অভ্যন্তরের গঠন চিহ্নিতকরণে ভূকম্প তরঙ্গের ভূমিকা

1. P ও S তরঙ্গের প্রতিফলন ও প্রতিসরণ বিশ্লেষণ করে পৃথিবীর অভ্যন্তরের স্তর চিহ্নিত করা যায়।
2. S তরঙ্গ গুরুমণ্ডল বা কোরে পৌঁছায় না – যার মানে কোরের বাইরের অংশ তরল।
3. P তরঙ্গের গতি তরল অঞ্চলে কমে যায় এবং কেন্দ্রমণ্ডলের গভীরে আবার গতি বাড়ে।
4. ভূকম্প তরঙ্গের ভিত্তিতে তৈরি 3D অভ্যন্তরীণ মানচিত্রকে বলা হয় Seismic Topography।
5. ভূত্বক ও গুরুমণ্ডলের মধ্যবর্তী বিযুক্তি রেখা – Mohorovicic Discontinuity (Moho)
6. গুরুমণ্ডল ও কেন্দ্রমণ্ডলের মধ্যবর্তী বিযুক্তি রেখা – Gutenberg Discontinuity

---

📌 SLST পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট (Revision-Friendly Bullet Points)

• P তরঙ্গ সব মাধ্যমে চলে, কিন্তু S তরঙ্গ কেবল কঠিন মাধ্যমে।
• S তরঙ্গ কেন্দ্রমণ্ডলে প্রবেশ করতে পারে না।
• Love তরঙ্গ – পাশ থেকে পাশ দোলানো পৃষ্ঠ তরঙ্গ।
• ভূকম্প তরঙ্গ রেকর্ড করার যন্ত্র: সিসমোগ্রাফ (Seismograph)
• ভূকম্পবিদ্যার বিজ্ঞানকে বলা হয়: Seismology
• P তরঙ্গ প্রথম উপকেন্দ্রে পৌঁছায়, এরপর S, এরপর Surface তরঙ্গ।
• Shadow Zone: 104°-140°, যেখানে P ও S তরঙ্গ ধরা পড়ে না।
• ভূ-অভ্যন্তরস্থ স্তর বিন্যাস বিজ্ঞানীরা ভূ-কম্পীয় তরঙ্গের সাহায্যে করে থাকেন।
• তিনটি ভূ-কম্পীয় তরঙ্গ হল প্রাথমিক [P], গৌণ [S] এবং পৃষ্ঠীয় তরঙ্গ [L]।
• P, S তরঙ্গ অপেক্ষা L তরঙ্গের গতিবেগ কম হলেও এই তরঙ্গ সর্বাধিক ধ্বংসাত্মক।
• পৃথিবীর আভ্যন্তরীণ তিনটি স্তর হল- কেন্দ্রমন্ডল, গুরুমন্ডল, শিলামন্ডল।
• এই স্তরগুলি যে কাল্পনিক তল দ্বারা বিচ্ছিন্ন থাকে, তাদের বিযুক্তি তল বলা হয়।
• বিযুক্তি তলগুলির নাম আবিষ্কারক ভূ-বিজ্ঞানীদের নাম অনুসারেই করা হয়।
• ভূ-ত্বককে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়- সিয়াল ও সিমা।
• সিয়াল ও সিমার মধ্যে রয়েছে- কনরাড বিযুক্তিতল।
• শিলামন্ডল ও গুরুমন্ডলের মধ্যে রয়েছে মোহোবিযুক্তি রেখা।
• গুরুমন্ডল ও কেন্দ্রমন্ডলের মধ্যে রয়েছে উইচার্ট গুটেনবার্গ বিযুক্তিতল।
• অন্তঃগুরুমন্ডল ও বহিঃগুরুমন্ডল মধ্যে রয়েছে রেপটি বিযুক্তিতল । 
• অন্তঃকেন্দ্রমন্ডল ও বহিঃকেন্দ্রমন্ডলের মধ্যে রয়েছে লেহম্যান বিযুক্তিতল।

---

✅ পরীক্ষায় আসতে পারে এমন কিছু নমুনা প্রশ্ন (MCQ) দেখুন এখানে:

👉 ✔️ ৫০টি এমসিকিউ প্রশ্নোত্তর ব্যাখ্যাসহ পড়ুন এখানে 

---

 উপসংহার

ভূকম্প তরঙ্গ এবং পৃথিবীর অভ্যন্তরের গঠন বুঝতে পারা শুধু পরীক্ষার জন্য নয়, বরং একটি জ্ঞানের চাবিকাঠি। SLST বা অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় এই অধ্যায় থেকে প্রায়ই প্রশ্ন আসে। তাই উপরের আলোচনাটি মন দিয়ে পড়ো, নোট তৈরি করো এবং প্রতিনিয়ত রিভিশন দিতে থাকো। দরকার হলে, উপরের MCQ গুলোকেও আলাদা করে প্র্যাকটিস করো।

---

📹 আমাদের YouTube চ্যানেলেও দেখো: Lekhapora
📘 ফেসবুকে আমাদের ফলো করো: Study Take