শিলা: গঠন, বৈশিষ্ট্য, প্রকারভেদ ও ব্যবহার | Rocks: Formation, Properties, Types & Uses

প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য, শ্রেণীবিভাগ ও ব্যবহার
শিলা (Rocks) 

 প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য, শ্রেণীবিভাগ ও ব্যবহার

শিলা (Rocks) পৃথিবীর ভূত্বকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি এক বা একাধিক খনিজের প্রাকৃতিক সমষ্টি। ভূগোল এবং ভূতত্ত্বে শিলা নিয়ে পড়াশোনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ পৃথিবীর গঠন এবং ইতিহাস বোঝার জন্য শিলা একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।

শিলা কী?

শিলা হল কঠিন খনিজ পদার্থের প্রাকৃতিক সমষ্টি যা পৃথিবীর ভূত্বকের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি এক বা একাধিক খনিজ দিয়ে গঠিত হতে পারে এবং প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সৃষ্টি হয়। শিলা প্রাথমিকভাবে আগ্নেয়, পাললিক এবং রূপান্তরিত শিলার সমষ্টি। প্রতিটি শিলার গঠন, প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য আলাদা হয়ে থাকে।

শিলার বৈশিষ্ট্য

শিলার বৈশিষ্ট্য তাদের গঠন, রঙ, ঘনত্ব, এবং গঠনে ব্যবহৃত খনিজ পদার্থের উপর নির্ভর করে। নিচে শিলার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরা হলো:

  1. গঠনগত বৈচিত্র্য: শিলা কঠিন, নরম, দানাদার, বা স্তরযুক্ত হতে পারে। কিছু শিলা যেমন গ্রানাইট খুব কঠিন, আবার চুনাপাথর অপেক্ষাকৃত নরম।
  2. উৎপত্তির ধরণ: শিলার উৎপত্তি বিভিন্ন প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়। এগুলো হতে পারে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, নদী বা হ্রদের তলদেশে পলি জমা, অথবা ভূত্বকের তাপ ও চাপের প্রভাবে।
  3. রঙ ও ঘনত্ব: শিলার রঙ এবং ঘনত্ব তাদের গঠনকারী খনিজের উপর নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ, বেসাল্ট কালো রঙের এবং ঘনত্ব বেশি, আর বালিপাথর হালকা রঙের।
  4. স্তরবিন্যাস: কিছু শিলায় স্পষ্ট স্তর দেখা যায়, যেমন পাললিক শিলায়। এটি তাদের উৎপত্তি এবং সময়ের ইতিহাস নির্দেশ করে।
  5. ছিদ্রতা (Porosity): কিছু শিলা যেমন বালিপাথর (Sandstone) জল ধারণ করতে সক্ষম, আবার গ্রানাইটের মতো শিলায় ছিদ্র থাকে না।

শিলার শ্রেণীবিভাগ

শিলাকে সাধারণত তাদের উৎপত্তির ভিত্তিতে তিন ভাগে ভাগ করা হয়:

১. আগ্নেয় শিলা (Igneous Rocks)

এই শিলাগুলো ম্যাগমা বা লাভা ঠান্ডা হয়ে জমাট বাঁধার মাধ্যমে তৈরি হয়। আগ্নেয় শিলাকে আবার অভ্যন্তরীণ (Intrusive) এবং বহিরাগত (Extrusive) শিলায় ভাগ করা হয়।

উদাহরণ:

  • অভ্যন্তরীণ আগ্নেয় শিলা: গ্রানাইট (Granite), ডায়োরাইট (Diorite)
  • বহিরাগত আগ্নেয় শিলা: বেসাল্ট (Basalt), অবসিডিয়ান (Obsidian)

বৈশিষ্ট্য:

  • কঠিন ও ঘন
  • সাধারণত স্ফটিকাকার গঠন দেখা যায়।
  • রঙ কালো, ধূসর বা লালচে হতে পারে।

২. পাললিক শিলা (Sedimentary Rocks)

পানি, বায়ু বা বরফের মাধ্যমে স্থানান্তরিত পলি বা অবক্ষেপ জমে এই শিলা গঠিত হয়। এগুলোর স্তর থাকে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এতে জীবাশ্ম পাওয়া যায়।

উদাহরণ:

  • বালিপাথর (Sandstone)
  • চুনাপাথর (Limestone)
  • শেল (Shale)

বৈশিষ্ট্য:

  • স্তরবিন্যাস স্পষ্ট।
  • ছিদ্রযুক্ত এবং জল ধারণ করতে সক্ষম।
  • জীবাশ্ম বিদ্যমান থাকতে পারে।

৩. রূপান্তরিত শিলা (Metamorphic Rocks)

তাপ, চাপ এবং রাসায়নিক পরিবর্তনের মাধ্যমে বিদ্যমান আগ্নেয় বা পাললিক শিলা রূপান্তরিত হয়ে এই শিলায় পরিণত হয়।

উদাহরণ:

  • মার্বেল (Marble) — চুনাপাথর থেকে গঠিত।
  • নাইস (Gneiss) — গ্রানাইট থেকে গঠিত।
  • স্লেট (Slate) — শেল থেকে গঠিত।

বৈশিষ্ট্য:

  • অত্যন্ত কঠিন ও মজবুত।
  • চকচকে বা দানাদার টেক্সচার থাকতে পারে।
  • স্তরবিন্যাস অনিয়মিত।

শিলার ব্যবহার

শিলার ব্যবহার বহুমুখী এবং আমাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

১. নির্মাণ শিল্পে

গ্রানাইট, মার্বেল, এবং চুনাপাথর নির্মাণ কাজের জন্য খুবই জনপ্রিয়। এগুলো বিল্ডিং নির্মাণ, রাস্তাঘাট, মেঝে এবং দেয়ালে ব্যবহৃত হয়।

২. শিল্পক্ষেত্রে

বিভিন্ন মূল্যবান ধাতু এবং খনিজ আহরণের জন্য শিলা ব্যবহৃত হয়। লোহা, তামা, সোনা, এবং অ্যালুমিনিয়াম উত্তোলনে শিলার ভূমিকা রয়েছে।

৩. অলংকারে

মূল্যবান শিলা এবং খনিজ যেমন হীরা, নীলমণি অলংকার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এগুলো দেখতে সুন্দর এবং আর্থিক মূল্যও বেশি।

৪. কৃষি কাজে

কৃষিকাজে চুনাপাথর মাটির pH নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হয়। এটি মাটির উর্বরতা বাড়াতে সাহায্য করে।

৫. শক্তির উৎস

কয়লা এবং তেল শিলা (Oil Shale) শক্তির অন্যতম বড় উৎস। বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং জ্বালানি হিসেবে এগুলো ব্যবহৃত হয়।

উপসংহার

শিলা আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিভিন্ন প্রাকৃতিক এবং মানবসৃষ্ট কাজে শিলা ব্যবহৃত হয়। ভূতাত্ত্বিক গবেষণায় শিলা বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমরা পৃথিবীর গঠন এবং ইতিহাস সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য পেতে পারি।


Post a Comment

Previous Post Next Post